৫০ বছরের বেশি সময় চলচ্চিত্রে রাজ্জাক, ফারুক, সোহেল রানা, উজ্জ্বল, জাফর ইকবাল ও বুলবুল আহমেদের মতো শীর্ষ অভিনেতাদের সঙ্গে কাজ করেছেন তিনি। ঢাকার চলচ্চিত্র ইতিহাসের অন্যতম জনপ্রিয় জুটি ছিলেন রাজ্জাক-কবরী। তাঁদের বিপুল জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা প্রসঙ্গে গণমাধ্যমে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে কবরী বলেছিলেন, ‘আমরা এতটাই আবেগ দিয়ে অভিনয় করতাম যে, ছবির প্রতিটি দৃশ্যকেই জীবন্ত করে তুলতাম।’ অভিনয়ের জন্য কবরী পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, আজীবন সম্মাননাসহ বহু পুরস্কার ও সম্মাননা।
কিংবদন্তিতুল্য অভিনয়শিল্পী সারাহ বেগম কবরীর অকালপ্রয়াণ বাংলাদেশের চলচ্চিত্র অঙ্গনের জন্য এক বিরাট দুঃসংবাদ। মিষ্টি মেয়ে হিসেবেই সর্বস্তরে তার পরিচিতি ও গ্রহণযোগ্যতা গড়ে উঠেছিল। একনিষ্ঠ সাধনা, ধারাবাহিকভাবে ভাল থেকে আরও ভাল কাজ করে যাওয়া এবং সমাজে ইতিবাচক ভাবমূর্তি ধরে রাখা- এর কোনটারই ঘাটতি ছিল না তার। একবার সংসদ সদস্য পর্যন্ত হয়েছিলেন তিনি। বয়স একাত্তর হলেও তিনি ছিলেন কর্মঠ, সদাউদ্যোগী ও তারুণ্যে ভরপুর। সময়ের পরিবর্তনে পর্দার সামনে থেকে তিনি চলে এসেছিলেন পর্দার পেছনে, কাজ করতেন নেপথ্যে একজন চিত্র পরিচালক হিসেবে। লাইফ সাপোর্ট থেকে অনেকেরই ফিরে আসার নজির রয়েছে। কবরীও ফিরবেন এমন প্রত্যাশা ছিল কোটি ভক্তকুলের। অমোঘ মৃত্যু শেষ পর্যন্ত তাকে ছিনিয়ে নিল। তার এই আকস্মিক প্রয়াণে শোকের প্রগাঢ় ছায়া নেমে এসেছে চলচ্চিত্রাঙ্গনে, সমাজের সর্বস্তরেই। রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শোক প্রকাশ করেছেন। শোক জানিয়েছেন সর্বস্তরের মানুষ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ভরে উঠেছে শোকবিহ্বল বাক্যে।
দেড় দশক আগে চলচ্চিত্র জীবনের দ্বিতীয় পর্যায় শুরু করেন কবরী ‘আয়না’ নামের একটি ছবি নির্মাণের মাধ্যমে। ওই ছবির একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে তিনি অভিনয়ও করেছিলেন। এরপর রাজনীতিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন তিনি। ২০০৮ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। যুক্ত হয়েছেন অসংখ্য নারী অধিকার ও সমাজসেবামূলক সংগঠনের সঙ্গে। অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৭-তে প্রকাশিত হয়েছে তার আত্মজীবনীমূলক বই ‘স্মৃতিটুকু থাক’। অসম্পূর্ণ অনেক কাজ, অনেক স্বপ্ন রেখেই চলে গেলেন কবরী। কিন্তু দেশবাসীর জন্য যা রেখে গেলেন তা এককথায় অসামান্য। রূপকথার রানী হয়ে তিনি বেঁচে থাকবেন আমাদের হৃদয়ের মণিকোঠায়।
Discussion about this post