মের ৫ তারিখ পর্যন্ত সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের ছুটির মেয়াদ বাড়লেও পোশাক শিল্প কারখানা নিজ উদ্যোগে খোলার ব্যবস্থা করা হয়েছে। মালিক পক্ষ থেকে এমন ঘোষণা ছাড়াও শ্রমিকদের মোবাইলেও তেমন বার্তা পৌঁছে দেয়া হয়। ফলে কারখানা খোলার আগে থেকেই শ্রমিকরা বিভিন্ন স্থান থেকে কর্মস্থলে যোগ দিতে প্রাণপণে ছুটে আসছে। এ কথা অনস্বীকার্য পোশাক শিল্প দেশের রফতানি শিল্পের অন্যতম সমৃদ্ধ খাত। বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের চাহিদা নজরকাড়া। তারপরেও করোনা সংক্রমণের এমন বিপর্যয়ে শিল্প কারখানা খুলতে গেলে স্বাস্থ্য সুরক্ষা থেকে আরম্ভ করে জীবনের ঝুঁকির ব্যাপারটিকেও বিশেষ আমলে নিতে হবে।
আমরা জানি, পোশাক শিল্প কারখানার অভ্যন্তরীণ পরিবেশ অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর এবং বিপজ্জনক। এক রুমে গাদাগাদি করে শ্রমিকরা যে মাত্রায় উৎপাদনে নিজেদের শ্রমকে কাজে লাগায়, তা কোনভাবেই তাদের সুরক্ষার জন্য অনুকূল নয়। শুধু সামাজিক দূরত্ব নয়, ব্যক্তিক বিচ্ছিন্নতাকেও বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে, সর্বনাশা সংক্রমণকে প্রতিরোধে। যা পোশাক শিল্প কারখানায় প্রায় অনুপস্থিত। একটা ওয়াশ রুমে অসংখ্য শ্রমিকের যাতায়াত। যা কোনভাবেই স্বাস্থ্য বিধিনিষেধকে অনুসরণ করে না। আবার শ্রমিকদের আবাসিক এলাকাটিও বস্তির মতো পরিবেশ দূষণের অন্যতম ক্ষেত্র। কর্মস্থল এবং বাসস্থান কোনটাই এই মুহূর্তে তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার অনুকূলে নয়। এছাড়া এখনও অনেক পোশাক শিল্প শ্রমিক তাদের মার্চের বেতন-ভাতা থেকেও বঞ্চিত। যার কারণে সামাজিক দূরত্বকে উপেক্ষা করে তাদের রাস্তায় নেমে সড়ক অবরোধ আর মিছিলে অংশ নিতে বাধ্য হয়েছে। এমন অস্বস্তিকর আর স্বাস্থ্যঝুঁকির পরিবেশ তৈরি করে মালিকপক্ষ কোন বিধিতে তাদের দিয়ে পুনরায় কারখানা চালু করার কথা ভাবছেন, সেটি চিন্তার বিষয় বৈকি। কারখানা খুললে ঈদের আগে তা বন্ধও হবে। তখন আবার কর্মস্থল থেকে গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার হিড়িকও বাড়বে। যা করোনাভাইরাসের বহুল সংক্রমণকে স্বাগত জানাতে পারে।
তবে এবার মালিক পক্ষ বলেছে, ভেতরের পরিবেশকে যথাসম্ভব সুরক্ষিত করা হবে। সামাজিক দূরত্বকেও বিশেষভাবে বিবেচনায় রাখা হয়েছে। কাজের মধ্যে যারা আক্রান্ত হবে তাদের ব্যাপারেও যথেষ্ট সাবধানতা অবলম্বন করা হবে। স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে তাদের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন এবং প্রয়োজনে আইসোলেশনেরও ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে শ্রমিকদের ঘনবসতিপূর্ণ বস্তি এলাকায় তাদের সুরক্ষার বিপরীতে ভয়াবহতার দিকে এগিয়ে যাওয়ার শঙ্কাই সব থেকে বেশি। সুতরাং তেমন বিপন্নতাকে আমলে নিয়ে মালিক পক্ষকে শ্রমিকদের কাজে লাগানো মানবিক ও নৈতিক দায়বদ্ধতা। কারণ করোনার সংক্রমণ শুধু ব্যক্তিকেন্দ্রিক নয়, সামাজিক বিপর্যয়কেও দারুণভাবে সামলাতে হয়। ফলে শ্রমিকদের নিরাপত্তার সঙ্গে জড়িয়ে থাকবে সমাজের সার্বিক সুরক্ষাও।
Discussion about this post