এস এম এম সেলিম উল্লাহ:
শাহ্ আস্ত হোসাইন, বাদশাহ্ আস্ত হোসাইন,
দ্বীন আস্ত হোসাইন, দ্বীনে পানাহ্ আস্ত হোসাইন।
সারদাদ না দাদ দাস্ত, দার দাস্তে এজিদ,
হক্ক কে বানায়ে লা ইলাহ আস্ত হোসাইন।।
অর্থাৎ- আধ্যাত্মিক জগতের সম্রাট হলেন হোসাইন (রা.),
বাদশাহ হলেন হোসাইন (রা.),
ধর্ম হলেন হোসাইন (রা.),
ধর্মের আশ্রয়দাতা হলেন হোসাইন (রা.)।
দিলেন মাথা মোবারক, না দিলেন বায়াতের হাত, ইয়াজিদের হাতে।
সত্য তো এটাই যে লা-ইলাহার সমস্ত স্তম্ভই হলো হোসাইন (রা.)।
(দিওয়ানে-হযরত খাজা গরীবে নেওয়াজ)
পবিত্র কুরআন শরীফের আয়াত মর্মে নবী-বংশের মর্যাদা
১. “হে নবী-পরিবার। আল্লাহ্ তা’আলা তো কেবল তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে চান এবং তোমাদেরকে সম্পূর্ণরূপে পূতঃপবিত্র করতে চান।” (সূরা আল আহযাব, আয়াত:৩৩)।
আল্লামা ইবনু হাজর আল হাইতমী (র.) বলেন, “এই আয়াতে করীমাটি নবী করীম (দ.) এর পবিত্র বংশধরদের সম্মান ও মর্যাদার উৎস। কেননা, আয়াতে করীমাটি (ইন্নামা) দ্বারা শুরু হয়েছে, যা (হাসর) সীমাবদ্ধতার উপকারিতা দেয়। এখানে আল্লাহ্্ তায়ালার উদ্দেশ্য হচ্ছে, তাঁদের [নবী করীম (দ.) এর পবিত্র বংশধরদের] থেকে গুণাহ্ ও সন্দেহসহ যেকোন ধরনের অপবিত্রতা দূর করা এবং তাদেরকে যেকোনো চারিত্রিক ত্রুটি ও মন্দ স্বভাব থেকে পবিত্র করা।
২. “অতঃপর আপনার নিকট সত্য আগত হওয়ার পর যে ব্যক্তি এ বিষয়ে আপনার সাথে তর্ক করে তাকে বলুন, আসো, আমরা (মুবাহালা তথা দু’পক্ষ পরস্পকে অভিশাপ দেয়ার জন্য) আহ্বান করি আমাদের পুত্রদেরকে ও তোমাদের পুত্রদেরকে, আমাদের নারীদেরকে ও তোমাদের নারীদেরকে, আমাদের নিজেদেরকে ও তোমাদের নিজেদেরকে। অতঃপর আমরা মুবাহালা করি এবং মিথ্যাবাদীদের ওপর (আল্লাহ্) অভিশাপ কামনা করি।” (সূরা আলে ইমরান : ৬১)
আল্লামা ইবনু হাজার আল-হাইতামী (রা.) বলেছেন, আয়াতে কারীমায় “আবনা য়ানা”/“আমাদের পুত্রদেরকে” দ্বারা হযরত হাসান ও হযরত হোসাইন (রা.) উদ্দেশ্য। আর রাসূল তনয়া হযরত ফাতেমার সন্তান-সন্তুতি এবং তাঁদের পরবর্তী বংশধরকে রাসূল (দ.)’র সন্তান বলে অভিহিত করা হয়েছে এবং তাঁরা রাসূল (দ.) প্রকৃত, দুনিয়া ও পরকালের উপকারী বংশধর হিসেবে সম্বোধিত হবেন।
হাদিসে পাকের বাণী:- হুবশী ইবনু জুনাদাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (দ.) বলেছেন- আলী আমার হতে এবং আমি আলী হতে। আমার কোন কাজ থাকলে আমি নিজেই সম্পন্ন করি অথবা আমার পক্ষ হতে তা আলীই সম্পন্ন করে। (তিরমিজি-৩৭১৯,ইবনু মাজাহ্ ১১৯)
এ হাদিস শরীফ দ্বারা আহলে বাইতের মর্যাদা উপলব্ধি করা যায়। এই আহলে বাইতে যে দু’জন উল্লেখযোগ্য তাঁরা হলেন দ্বীন ইসলামের পূর্ণ জীবন দানকারী বিশ্ব মুসলিমের জন্য ইসলামের তরে ত্যাগের আদর্শ হযরত ইমাম হাসান ও হযরত ইমাম হোসাইন (রা.) যারা রাসূলে পাকের দুই নয়নের মনি।
আনাস ইবনু মালিক (রা.) থেকে বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ্ (দ.)- কে প্রশ্ন করা হল, আপনার আহলে বাইত –এর সদস্যগণের মধ্যে কে আপনার নিকট সবচাইতে প্রিয়? তিনি বললেনঃ আল-হাসান ও আল-হোসাইন। তিনি ফাতেমা (রা.)-কে বলতেনঃ আমার দুই সন্তানকে আমার কাছে ডাক। তিনি তাদের ঘ্রাণ নিতেন এবং নিজের বুকের সাথে লাগাতেন। (মিশকাত-৬১৫৮)
এই আহলে বাইতের শানে প্রিয়নবী (দ.) আরো ঘোষণা করেন, আবূ সা’ঈদ আল-খুদরী (রা.) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (দ.) বলেছেন, আল-হাসান ও আল-হোসাইন (রা.) প্রত্যেকেই জান্নাতী যুবকদের সরদার। (তিরমিজি-৩৭৬৮, সহিহা-৭৯৬)
আহলে বাইতকে ভালবাসা অর্থ হল আশুরার মর্যাদায় উজ্জীবিত হয়ে কারবালার হোসাইনী ত্যাগের আদর্শকে নিজেদের জীবনে বাস্তবায়ন করা। এবং এটাই হবে আহলে বাইতের প্রকৃত ভালোবাসা এবং আশুরার শিক্ষা। তাদেরকে ভালোবাসার ব্যাপারে প্রিয় নবী ইরশাদ করেন, আলী ইবনু আবু তালিব (রা.) থেকে বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ্ (দ.) হাসান ও হুসাইনের হাত ধরে বলেন, যে ব্যক্তি আমাকে ভালোবাসে এবং এ দু’জনও তাদের পিতা-মাতাকে ভালোবাসে, সে কিয়ামতের দিন আমার সাথে একই মর্যাদায় থাকবে। (আত তিরমিজি-৩৭৩৩,যইফ-যইফা -৩১২২, তাখরীজুল মুখতারাহ্ -৩৯২-৩৯৭)
প্রিয় নবীর সাহাবীগণ প্রতিটা কার্যক্রমে আহলে বাইতের আদর্শকেই উপমা হিসেবে ব্যবহার করতেন। যেমন আবদুর রহমান ইবনু আবী নু’ম (রহ.) থেকে বর্ণিতঃ এক ইরাকবাসী মাছির রক্ত কাপড়ে লাগলে তার বিধান প্রসঙ্গে ইবনু উমার (রা.) এর কাছে জানতে চায়। ইবনু উমার (রা.) বললেন, তোমরা তার প্রতি লক্ষ্য কর, সে মাছির রক্ত প্রসঙ্গে প্রশ্ন করছে। অথচ তারাই রাসূলুল্লাহ্ (দ.)-এর পুত্রকে (নাতি হোসাইন) হত্যা করেছে। রাসূলুল্লাহ্ (দ.) -কে আমি বলতে শুনেছিঃ আল-হাসান ও আল-হোসাইন দু’জন এই পৃথিবীতে আমার দু’টি সুগন্ধময় ফুল। (সহীহঃ মিশকাত ৬১৫৫, ৫৬৪-বুখারী)
আশুরার সেই কারবালার মর্মান্তিক ঘটনার বর্ণনা রসূল (দ.) জীবদ্দশায় দিয়েছেন, সালমা (আল-বাকরিয়া) (রা.) থেকে বর্ণিতঃ আমি উম্মূ সালমা (রা.) এর নিকট গিয়েছিলাম, তখন তিনি কাঁদছিলেন। আমি বললাম, কিসে আপনাকে কাঁদাচ্ছে? তিনি বললেন, আমি স্বপ্নে রাসূলুল্লাহ্ (দ.) কে দেখেছি যে, তাঁর মাথায় ও দাড়িতে ধূলা জড়িয়ে আছে। আমি বললাম, হে আল্লাহ্্র রাসূলুল্লাহ! আপনার কি হয়েছে? তিনি বললেন, আমি এইমাত্র হুসাইনের নিহত হওয়ার জায়গায় হাযির হয়েছি। (মিশকাত ৬১৫৭)। সুতরাং কারবালার মহান ত্যাগের হোসাইনী অনুপ্রেরণায় অনুপ্রাণিত হয়ে জীবনযাপনের নামে প্রকৃত ইসলামী জিন্দেগী এবং নবীর আহলে বাইত ও নবীর প্রতি পূর্ণ ভালোবাসা। ইয়া‘লা ইবনু র্মুরাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিতঃ রাসূল য়ি বলেছেনঃ হোসাইন আমার হতে এবং আমি হোসাইন হতে। যে লোক হোসাইনকে মুহাব্বত করে, আল্লাহ্্্ তাকে মুহাব্বাত করেন। নাতিগণের মাঝে একজন হল হোসাইন। (তিরমিজী-৩৭৭৫, ইবনু মাজাহ -১৪৪)।
আল্লাহ্ আমাদের সকলকে আশুরার সেই ঐতিহাসিক ত্যাগের জীবন অর্জন করার তৌফিক দান করুন আমিন। ইমাম ত্বাবরানী হযরত মোত্তালিব ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে হানতাব (রা.) থেকে তিনি তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (দ.) আমাদেরকে উদ্দেশ্য করে যুহফাতে ভাষণ দিলেন, অতঃপর বললেন, ‘আমি কি তোমাদের জন্য তোমাদের প্রাণের চেয়েও নিকটে নই? সাহাবা সকলে বলল, অবশ্যই, হে আল্লাহ্্র রাসূল (দ.)! তখন রাসূলুল্লাহ য়ি বললেন, তাহলে নিশ্চয় আমি তোমাদেরকে দুটি বিষয়ে দায়িত্ব দিচ্ছি, (তা হচ্ছে) কুরআনের ব্যাপারে এবং আমার পরিবারবর্গের (বংশধরদের) ব্যাপারে। (সূত্র: মাজমাউয যাওয়ায়েদ, হাইজামী ৫:১৯৫)
খতীব বাগদাদী তার ‘আত-তারীখ’-এ হযরত আলী (রা.) এর সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (দ.) ইরশাদ করেন, “আমার উম্মতের ঐসব লোকের জন্য আমার শাফায়াত (সুপারিশ) থাকবে একমাত্র যারা আমার পরিবারবর্গ (আহলে বাইত) কে ভালবেসেছে। (সূত্র: তারীখুল বাগদাদ-২:১৪৬)
ইমাম ত্বাবরানী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.)’র সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (দ.) ইরশাদ করেন, ‘আমি আমার উম্মতের যাদের জন্য সর্বপ্রথম শাফায়াত (সুপারিশ) করব, তারা হলেন, আমার পরিবারবর্গ (আহলে বাইত)। (সূত্র:-আল মু’জামুল কাবীর, ১২:৩২১ (১৩৫৫০) মাজমাউয যাওয়ায়েদ, হাইছামী, ১:৩৮০,আল মাওদাহ, খতীব বাগদাদী ২:৪৮,আল ফেরদৌস, দায়লামী, ১:২৩ (২৯),আল কামেল, ইবনে আদী, ২:৭৯০)
ইমাম ত্বাবরানী হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস (রা.)’র সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (দ.) ইরশাদ করেন, কোন বান্দাহ ততক্ষণ অগ্রসর হতে পারবেনা, যতক্ষণ না তাকে চারটি প্রশ্ন করা হবে। (তা হচ্ছে) ১. তার বয়সের ব্যাপারে যে, সে তা কীভাবে ব্যয় করেছে, ২. তার শরীরের ব্যাপারে যে, তা সে কীভাবে ক্ষয় করেছে। ৩, তার সম্পদের ব্যাপারে যে, সে তা কীভাবে খরচ করেছে এবং কোথায় হতে আয় করেছে। ৪. এবং আমার পরিবারবর্গের (আহলে বাইত) ভালবাসার ব্যাপারে। [সূত্র:-আল মু’জামুল কাবীর, ১১:৮৩ (১১১৭৭), আল মু’জামুল আওসাত, ১০:১৮৫ (৯৪০২)।]
ইমাম দায়লামী হযরত আলী (রা.) এর সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (দ.) ইরশাদ করেন, “তোমাদের মধ্যে সিরাতের (জাহান্নামের ওপরে স্থাপিত একটি চুলের চেয়ে সুক্ষ্ম, তরবারীর চেয়ে ধারালো, অসংখ্য কাটাযুক্ত, অন্ধকার ও বিকট শব্দপূর্ণ দীর্ঘ সেতু বা পুল) ওপর ঐ ব্যক্তিই সবচেয়ে বেশি অটল থাকবে, যে আমার বংশধরগণ ও আমার সাহাবাগণকে বেশি বেশি ভালবাসবে”। [সূত্র: আল কামেল, ইবনু আদী, ৬:২৩০৪, কানযুল উম্মাল, আল মুত্তাফিউল হিন্দ, ১২:৯৬ (৩৪১৫৭)।] যাখাইরুল উক্ববা, তাবারী, ৮৩ পৃষ্ঠায় আছে হযরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম (দ.) ইরশাদ করেন, আল্লাহ্ তাঁর রাসূল য়ি এবং তার ফেরেকুাগণ কঠোরভাবে রাগান্বিত হন সে ব্যক্তির ওপর যে নবী করীম (দ.) এর রক্ত প্রবাহিত করে, অথবা তাঁর পরিবার বর্গের দিক দিয়ে তাকে কষ্ট দেয়।
ইমাম দায়লামী হযরত আবু হুরাইরা (রা.)’র সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (দ.) ইরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহ্্ তা’আলা নিন্মোক্তদের ওপর রাগান্বিত হন,
১. তৃপ্ত হওয়ার পরও খাদ্য গ্রহণকারী, ২. আপন প্রতিপালকের অনুসরণ থেকে অমনোযোগী, ৩. তাঁর নবী য়ি’র সুন্নাতকে পরিত্যাগকারী, ৪. নিজ দায়িত্বে অবহেলাকারী, ৫. নবী করীম (দ.)’র বংশধর (আহলে বাইত)’র প্রতি হিংসা পোষণকারী, ৬. নিজ প্রতিবেশীকে কষ্টদানকারী। সূত্র:-কানযুল উম্মাল, আল মুত্তাকিউল হিন্দ, ১৬:৮৭ (৪৪০২৯)।
বিভিন্ন কিতাবে এই দিনের বিভিন্ন বিষয়ের কথা উল্লেখ পাওয়া যায়। যেমন ১. আদম আলাইহিস্্ সালাম এর তওবা কবুল হওয়া। ২. ইদ্রিস আলাইহিস্ সালাম কে ঊর্ধ্ব জগতে উঠিয়ে নেওয়া। ৩. নূহ (আ.)এর সঙ্গিগণ সহ নৌকায় আরোহীর মুক্তিলাভ। ৪. ইব্রাহিম (আ.) নমরুদী অগ্নিকু-ে হতে মুক্তি। ৫. মূসা (আ.) আল্লাহ্্র সাথে কথা বলা ও তাওরাত লাভ। ৬ আইউব (আ.) রোগ মুক্তি। ৭ ইউসুফ (আ.) ইয়াকুব (আ.) এর সাক্ষাৎ। ৮. ইউনুস (আ.) মাছের পেট থেকে মুক্তি। ৯ বনি ইসরাইল সমুদ্রের রাস্তা পাওয়া। ১০. দাউদ আল্লাহ্ কাছে তওবা করা। ১১. সোলাইমান (আ.)’র রাজত্ব ফিরে পাওয়া। ১২. ঈসা (আ.)’র আল্লাহ্ আরশে উঠিয়ে নেওয়া। ১৩. রাসূলুল্লাহর কাছে জিব্রাইল প্রথম আগমন। ১৪. প্রথম আকাশ হতে পৃথিবীতে বৃষ্টি বর্ষণ। ১৫. ইমাম হোসাইন সপরিবারে কারবালায় শহীদ।
এই ১০ই মহরমের সকল ঘটনা থেকে নির্মম ঘটনা হচ্ছে নবী-পরিবার শহীদ হওয়া। অতীতে যারা নবীগণ ও তাঁদের সঙ্গীগণকে অন্যায়ভাবে শহীদ করেছিল পবিত্র কোরআনে তাদের এই অপকর্মের কথা অহরহ বর্ণিত হয়েছে। পৃথিবীর সৃষ্টিলগ্ন থেকে ইতিহাসের সবচাইতে নির্মম ও নিষ্ঠুর ঘটনা এই কারবালা।
মদিনা শরীফের অবস্থা এতই করুণ হয়েছিল তা বর্ণনাতীত “হাররা” নামক এলাকার ঘটনা কারবালা হযরত ইমাম হোসাইন (রা.) শাহাদাতের পর মদিনায় যে অতীব লোমহর্ষক ও মর্মান্তিক ঘটনা সংঘটিত হয় তাকে হাররা ঘটনা নামে অভিহিত করা হয়। মদিনায় এসব হত্যাকা- সংঘর্ষ এই পবিত্র স্থানের অবমাননা ঘটেছে যা দ্বারা বিশিষ্ট লোকদের অন্তর কলুষিত হয়। এগুলির পূর্বাভাস হুজুরে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহিস্্হি ওয়াসাল্লাম করে গিয়েছেন, যেমন তিনি ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি মদিনাবাসীকে কষ্ট দেবে এবং ভয় দেখাবে সে দুনিয়া ও আখেরাতে আজাবে গ্রেপ্তার হবে! বুখারী শরীফে এবং মুসলিম শরীফে এই হাদীসে এসেছে আবু হোরায়রা বর্ণনা করেন নবীপাক ইরশাদ করছেন -কুরাইশ গোত্রের লোকের হাতে আমার উম্মত ধ্বংস হবে! সাহাবাগণ আরজ করলেন হে আল্লাহ্্র রাসূল তখন আমাদের জন্য কি নির্দেশ? তিনি ইরশাদ করলেন তখন তোমাদের এখান থেকে বের হয়ে যাওয়া এবং অন্য জায়গায় গিয়ে জীবন যাপন করা উচিত। অপর এক হাদীসে আবু হুরাইরা বর্ণনা করেন, হুজুর পাক ইরশাদ করেছেন যে, মহান সত্তার শপথ যার কুদরতের হাতে আমার জীবন, তারই শপথ করে বলছি মদিনায় এমন এক যুদ্ধ সংঘটিত হবে যার ফলে ধর্ম এখান থেকে এমনভাবে বেরিয়ে যাবে যেমন মাথা মু-নের ফলে চুল মাথা থেকে বের হয়ে যায়। সেদিন তোমরা মদিনার বাইরে চলে যেও অন্তত এক মঞ্জিলের ব্যবধানে হলেও আবু হুরায়রা থেকে আরো বর্ণিত আছে তিনি এভাবে দোয়া করতেন “হে আল্লাহ্্! আমাকে ৬০ হিজরীর ঘটনা এবং ছেলেদের রাজত্ব থেকে রক্ষা করুন”! সে আসার পূর্বে আমাকে দুনিয়া থেকে উঠিয়ে নিন! সিরাত লেখকগণ বর্ণনা করেন বিশেষ করে কুরতুবী বলেন মদীনাবাসীদের মদিনা থেকে বাইরে চলে যাওয়ার কারণ এই হারার মর্মান্তিক ঘটনা। যে সময় মদিনা শরীফ অবশিষ্ট সাহাবা এবং তাবেঈদের দ্বারা পরিপূর্ণ এবং লোক বসতিতে ভরপুর এবং তার চিত্তাকর্ষক সাদৃশ্য বিদ্যমান। মদীনাবাসীদের ওপর একের পর এক বিপর্যয় এবং অঘটন নেমে আসে ফলে তারা মদিনা ছেড়ে বাইরে চলে যায়। দুষ্ট ইয়াজিদ মুসলিম ইবনে ওকবা’র নেতৃত্বে এক বিশাল সৈন্যবাহিনী যুদ্ধ করার জন্য মদিনায় প্রেরণ করে। ওই সৈন্যবাহিনী কমখ্ত লোকেরা এই হারার নামক স্থানে নিতান্ত নির্মমতা এবং অবমাননার সাথে এই মহাত্মাগণকে শহীদ করেন। তারা তিন দিন পর্যন্ত মসজিদে নববীর সম্মান হানির কাজে লিপ্ত ছিল। এই মর্মান্তিক ঘটনার প্রাক্কালে এজিদের কুচক্রী দল শিশু এবং মেয়ে লোক ব্যতীত ১২৪৯৭ জন লোককে হত্যা করে। যার মধ্যে ছিল ১৭০০ মুহাজির, আনসার, তাবেঈ, ওলামা ১০ হাজার সাধারণ লোক ৭০০ হাফেজে কুরআন ৯৭ জন কুরাইশ। ওই ঘটনায় এজিদের সৈন্যবাহিনী নানা প্রকার অত্যাচার অনাচার ও ধৃষ্টতাপূর্ণ অপকর্মে লিপ্ত হয় যেনার মত ভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। বর্ণিত আছে এই ঘটনার পর ১০০০ মেয়েলোক অবৈধ সন্তান প্রসব করে।
যেসব সাহাবায়ে কেরামকে মদিনায় জোরপূর্বক অমানুষিকভাবে হত্যা করা হয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছেন ফিরিস্তা কর্তৃক গোসলপ্রাপ্ত হযরত হানজালার পুত্র হযরত আব্দুল্লাহ, তিনি সাত পুত্র সহ শহীদ হন। রাসূল আল্লাহ্্র ওজুর বর্ণনা প্রদানকারী হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে যায়েদ, হযরত মা’কাল ইবনে শোনান যিনি মক্কা বিজয়ের প্রাক্কালে উপস্থিত ছিলেন এবং স্বীয় গোত্রের পতাকা হাতে ছিল। পাপীষ্ঠ মুসলিম বিন ওকবা এবং মারওয়ান ইবনুল হাকেম “হেরমে মদিনা”র শহীদগণের লাশের চতুর্পাশে ঘুরেফিরে কৌতুক তামাশায় মগ্ন ছিল। হঠাৎ তার দৃষ্টি আব্দুল্লাহ ইবনে হানজালা (রা.)উপর নিপতিত হলে দেখতে পেল তিনি তার শাহাদাত আঙ্গুল আসমানের দিকে উত্তোলন করে রেখেছেন।
এই ঘটনায় প্রসিদ্ধ সাহাবী হযরত আবু সাঈদ খুদরী সর্বশেষ লাঞ্ছিত হন এজিদ বাহিনীর হাতে। বর্ণিত আছে এই গুন্ডাবাহিনী তার দাড়ি মোবারক গোড়া থেকে উচ্ছেদ করে ফেলে। লোকেরা তার দাড়ির এই অবস্থা দেখে জিজ্ঞেস করতেন আপনি কি দাড়ি নিয়ে খেলছেন এবং দাড়ি উচ্ছেদ করে ফেলেছেন? তিনি উত্তর দিতেন না! বরং ঐ শাম দেশীয় লোকগুলো আমার উপর অত্যাচার করেছে। তাদের একদল লোক আমার ঘরে প্রবেশ করে ঘরের সমস্ত আসবাবপত্র নিয়ে যায় তারপর আরেকদল প্রবেশ করে কোন আসবাবপত্র না পেয়ে তারা আমার দাড়ি নিয়ে টানা হেঁচড়া করে যার পরিণতি তোমরা এখন দেখছো। এই দুষ্টু লোকেরা এভাবে আরো কত যে অবর্ণনীয় নিপীড়ন ও নির্যাতন চালিয়েছে তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।
ইসলামের দাবি যেমন * চুরি করা যাবে না। * ঠকানো যাবে না। * একে অপরের মালামাল জায়গা সম্পদ অন্যায়ভাবে দখল করা চলবে না * মানুষকে গায়ের রঙ, বংশ বা ভাষার নামে দমন করা যাবে না। * নারীদের অবজ্ঞা করা ও মেয়ে শিশুকে জীবন্ত কবর দেয়া যাবে না। * জঙ্গলের পশুর মত ব্যভিচার করা যাবে না। * মদ্যপান করা সহ কোন নেশা করা যাবে না। * নিজে যা খাবে কর্মচারীদের তা খাওয়াবে। নিজে যা পরিধান করবে, অধীনস্তদের তা পরিধান করাবে। * বানোয়াট প্রভুর মূর্তির সামনে রমরমা ধর্মব্যবসা করা যাবে না।
এই কুখ্যাত মুসলিম নামধারীরা উল্লেখিত কোন কর্ম না করে ছেড়েছে! প্রজন্মের পর প্রজন্ম তাদের েিপা বহমান নদী থেকে সৃষ্ট মানুষগণ নিজেদেরকে মুসলমান নামে পরিচয় দিচ্ছে না তো! আজ তারাই সমাজের উন্নত মুসলিম জাতি! কেউ সত্য কথা তুলে ধরলে নিজেদের অযোগ্যতার কথা জানতে চাইলে জানাতে চাইলে বড় একটা “ইহুদী-নাছারা ষড়যন্ত্র” নামের অপবাদ ছাড়া বর্তমান মুসলিম সমাজে আর কি পাওয়া যায়।
কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য আজ কিছু লোক কারবালা এবং ওই ঘটনা নিয়ে মহরম মাস আসলে “শাক দিয়ে মাছ ঢাকার মতো” এজিদের সাফাই গেয়ে নিজেদেরকে এজিদের উত্তরসূরী হিসেবে প্রমাণ করতে ব্যস্ত। অপরদিকে কেউ আহলে বাইতের প্রেম-ভালবাসা দেখালে তাদেরকে শিয়া নামে অপপ্রচারে ব্যাকুল হয়ে ওঠে। আমার লিখিত সত্য ঘটনা গুলোতে কারো সন্দেহ হলে সে যেন মুহাদ্দিসযুগের শেষ মুহাদ্দিস হযরত আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী লিখিত “জজবুল কুলুব ইলা দিয়ারেল মাহবুব” কিতাবখানা পড়ে দেখুন।
১৪৪৩ আরবি হিজরী সন
মহরম তার প্রথম মাসটি
মাতম করে আজ ইরাক দেশটি
কে জান হে মুসলিম গোষ্ঠী
না জানিলে অতীতে ফিরাও দৃষ্টি
মেলিয়ে জ্ঞান নয়ন।।
এরা কারা, সেদিন যারা ঘটাল কারবালা?
মুসলিম নয়তো তারা
নাকি মুসলিম নামে “বালা”!
এরাই কি ধর্মের নামে
“এনে দিলা ভবে আজি অনশন”!!
মুসলিম কেন মুসলিম মারে
স্বর্গ ছিনিয়ে নিতে পরপারে?
বাধা কি দেবে না তাদের আজগরে-
হোসাইনী কারা তারা ছিল কোন ঘরে?
নয় কি নবীজির তন?
কারে করি আমি এতই প্রশ্ন
কারবালা তুই বল
আজিকার যারা বীর মুসলিম
করেনিতো তারা ছল!
আল্লাতে মোদের এতই ভালোবাসা
ছেড়ে দিছি তাই রাসূল,
“শিরিক হবে যে” তাই ভেবে
নষ্টিছি তাদের মূল!!
জগত আজি জেনেছে হে ভাই
মূল ছাড়া হল গাছ,
তাইতো বিশ্বে অপদস্থ মুসলিম
এই করেছি আঁচ।
পরিশেষে আল্লাহ্ আমাদের সকলকে আশুরার সেই ঐতিহাসিক ত্যাগের জীবন অর্জন করার তৌফিক দান করুন আমিন।
Discussion about this post